Admin প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার , ৫ জানুয়ারী , ২০২৩
প্রায় দুই দশকের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করে নেয়। সে সময় তালেবান নেতারা আগের কট্টরপন্থা থেকে সরে এসে উদারনীতি গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু মুখের কথা ও বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রায় প্রতিটি দিনই দেশটির নারী ও মেয়েদের জন্য খারাপ খবর দিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীনেরা। নারীর স্বাধীনতা যেন খাঁচায় বন্দী।
গত মাসের শুরুর দিকে সাদাফ (ছদ্মনাম) নামের ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে ‘নৈতিক অপরাধে’দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি পুরুষ অভিভাবক (মাহরাম) ছাড়া এক পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। শাস্তি হিসেবে তাঁকে দোররা মারার সিদ্ধান্ত হয়। শাস্তি কার্যকরের আগের রাতে সাদাফ পরিবারের সবার কাছে থেকে বিদায় নেন। বাবাকে বলেন, তার কিছু হলে যেন ভেঙে না পড়েন এবং এই প্রদেশ ছেড়ে যান। পরের দিন তাঁকে অভিযোগকারী প্রতিবেশী ব্যক্তিসহ তালেবান নেতাদের উপস্থিতিতে দোররা মারা হয়।
সাদাফ বলেন, ‘তারা আমাকে ঘিরে ছিল। আমার হাত বাঁধা হয়। বলা হয়, চিৎকার করা যাবে না। কারণ, পুরুষদের কানে যেন বাইরের কোনো নারীর কণ্ঠস্বর না পৌঁছায়। তারপর তারা আমাকে দোররা মারতে শুরু করে। আমার বাবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে ওই ব্যক্তিকে আমাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমি যে অপরাধ করিনি, তার জন্য বাবা তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।’ সাদাফ বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাওয়ার আগে প্রায় ৩০ বার তাঁকে দোররা মারা হয়েছিল। সাদাফের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ কেন আনা হয়েছে এর কারণ হিসেবে তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, অভিযোগকারী ব্যক্তির ছেলেকে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ক্ষোভ থেকে এমনটা করা হয়েছে। সাদাফ বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে বলেছি, ইসলামে একজন নারীর অধিকার কী, তা আমি জানি। তাই আমি যদি আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে না চাই, তাহলে কেউ আমাকে জোর করতে পারে না। এ কথাতেই তিনি বেশ রেগে যান এবং আমাকে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করেন।’ তালেবান দোররা মারার মতো শাস্তি প্রকাশ্যে দেখাতে জনসমাগম হয় এমন স্থান এবং স্টেডিয়ামে জনতাকে জড়ো হতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। গত মাসের শেষের দিকে দেশটির পূর্বাঞ্চলে লোগার অঞ্চলে তিন নারীসহ ১২ জনকে প্রকাশ্যে দোররা মারা হয়। আর ৯ ডিসেম্বর পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকরে ৯ জন নারীসহ ২৭ জনকে দোররা মারা হয়। এক তালেবান কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘ব্যভিচার, ডাকাতি, সমকামিতাসহ নৈতিক অপরাধের দায়ে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’